Monday, May 6, 2024

রাত ১টা বাজলেই সেহরির জন্য খাবার নিয়ে হাজির হন মাহবুব

রাত প্রায় একটা। পাবনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল চত্বরে এসে থামে একটি অটোরিকশা। এরপর এক যুবক অটোরিকশা থেকে নেমে ‘সেহরি সেহরি’ বলে ডাকতে শুরু করেন। তার ডাকে আশেপাশে থেকে সে সময় ছুটে আসেন রিকশাচালক, ছিন্নমূল, পথচারী মানুষ।এরপর তাদের সবার হাতে রান্না করা সেহরির খাবার প্যাকেট তুলে দেন ওই যুবক। তার নাম দেওয়ান মাহবুব। মানবিক কাজের জন্য সবার কাছে তিনি মাহবুব ভাই নামেই পরিচিত। রমজানের শুরু থেকেই তিনি শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে প্রতিরাতে এসব মানুষের মাঝে সেহরি বিতরণ করে আসছেন বিনামূল্যে।

প্রতি রাতই একটা বাজলেই রান্না করা সেহরি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে সেহরি বিতরণ করেন মাহবুব। পথচারী, দিনমজুর, ছিন্নমূল, নৈশপ্রহরী, হাসপাতালের রোগী, স্বজনদের মাঝে তিনি সেহরি বিতরণ করেন। বিভিন্ন মানুষের আর্থিক সহায়তা ও দানের টাকায় গত চার বছর ধরে প্রতি রমজান মাসে এভাবেই মানবিক কাজ করে আসছেন সবার প্রিয় মাহবুব ভাই। দেওয়ার মাহবুরের বাসা পাবনা পৌর শহরের শিবরামপুর মহল্লায়। তার পিতার নাম অধ্যাপক দেওয়ান আজিজুল ইসলাম। তিনিও একজন মানবিক পরোপকারী মানুষ হিসেবে সর্বজন শ্রদ্ধেয়।

এই যুবক জানান, বিভিন্ন মানুষের দান ও আর্থিক সহায়তার টাকা দিয়ে প্রতিদিন বাজার করা থেকে শুরু করে রান্না ও প্যাকেটিং করার কাজ নিজেরাই করেন। প্রতিরাতে গাড়ি ভাড়া দিতে হয় ৫০০ টাকা। সব খরচ মিলিয়ে প্রতি প্যাকেট সেহরিতে খরচ পড়ে ৬০ টাকা। এভাবে প্রতিরাত একটা থেকে তিনটা পর্যন্ত ২০০ থেকে ২৫০ প্যাকেট সেহরি মানুষের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল চত্বর থেকে অন্তত মোড়, রায় বাহাদুর গেট, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, এ আর কর্নার, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র সহ অন্তত সাতটি পয়েন্টে সেহরি বিতরণ করেন মাহবুব। নৈশ প্রহরী, রিকশাচালক, ছিন্নমূল, পথচারী মানুষ, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও স্বজনদের মাঝে এই সেহরি বিতরণ করা হয়। কারণ তারা সেহরি করার সুযোগ পান না।

 যুবক আরও জানান, এই সেহরি কারা খায়। দেখবেন যারা রাতে রিকশা চালায়, নৈশপ্রহরী দায়িত্ব পালন করা মানুষ। যাদের বাসা দূরে। হঠাৎ করে হাসপাতালে এসেছে রোগী নিয়ে কিন্তু খাবার আনতে পারেনি। ছিন্নমূল মানুষ, পথচারী। তাদের কথা চিন্তা করে গত চার বছর ধরে প্রতি রমজান মাসে এই সেহরি বিতরণ করে আসছেন তিনি।মাহবুব জানান, তবে সেহরির চাহিদা রয়েছে আরও বেশি। অন্তত ৩৫০ জন মানুষকে প্রতিরাতে সেহরি দিতে পারলে মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যেত। কিন্তু আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় সেটি দিতে না পেরে কষ্ট পান তিনি। এজন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

প্রতিরাতে সময় মতো সেহরি পেয়ে খুশি মাহবুর ভাইয়ের সেহরির অপেক্ষায় থাকা ওই সব মানুষ। তারা বলেন, এমন মানবিক কাজ করায় মাহবুবকে স্যালুট জানান তারা। দেওয়ান মাহবুব জানান, ২০১১ সালে আমরা তহুরা আজিজ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন করেছি। সেই সংগঠনের উদ্যোগে সপ্তাহে দুইদিন শুক্র ও মঙ্গলবার বিনামূল্যে অসহায় মানুষদের ওষুধ বিতরণ করা হয়। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে টিউবওয়েল স্থাপন, নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য সেলাই মেশিন, মুরগি ও ছাগল বিতরণ করা হয়। বেকার দুঃস্থ মানুষকে স্বাবলম্বী করতে পুকুরে মাছচাষের জন্য মাছের পোনা ও খাদ্য সরবরাহ করা হয়।

এই সম্পর্কিত আরও খবর

সর্বশেষ আপডেট