বিশ্বের সবচেয়ে রোমান্টিক শহরগুলোর তালিকায় শীর্ষে থাকা প্যারিস শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাদের নয়, বরং ইতিহাসপ্রেমী, শিল্পপ্রেমী এবং খাদ্যরসিক সকল ভ্রমণপিপাসুর জন্য এক স্বপ্নের স্থান। ফ্রান্সের রাজধানী এই শহরটি তার আইফেল টাওয়ার, লুভর মিউজিয়াম, নটর ডেম ক্যাথেড্রাল, কফি শপ এবং কাব্যিক নদীর তীর দিয়ে বিখ্যাত।
আজকের আর্টিকেলে আমরা এক দিনের একটি আদর্শ ভ্রমণপথে ঘুরে দেখবো প্যারিসের গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানসমূহ, খাবার, কেনাকাটা, এবং কিছু দরকারি টিপস।
সকাল ৮টা: দিন শুরু হোক ল্য পেইন কুইটিডিয়েন-এ প্রাতঃরাশ দিয়ে
প্যারিসের সকালে ঘুম ভাঙে কফির সুগন্ধে। দিনটি শুরু করুন একটি জনপ্রিয় ক্যাফে – “Le Pain Quotidien” এ, যেখানে আপনি পাবেন ফ্রেঞ্চ ব্যাগুয়েট, ক্রোসাঁ এবং ফ্রেশ ওরেঞ্জ জুসের সাথে এক কাপ এসপ্রেসো।
খাবারের পরামর্শ:
-
ব্যাটার ক্রোসাঁ ও বাটারজ্যাম
-
ক্যাফে লাতে বা ক্যাপুচিনো
-
ফ্রুট সালাদ
সকাল ৯টা: আইফেল টাওয়ার দর্শন
প্যারিস মানেই আইফেল টাওয়ার। ১৮৮৯ সালে নির্মিত এই লোহার টাওয়ারটি প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটককে আকর্ষণ করে। আপনি চাইলে উপরে উঠেও পুরো শহরের এক বিস্ময়কর দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।
পরামর্শ:
-
আগে থেকে টিকিট বুক করে রাখুন
-
সূর্যোদয়ের সময় সবচেয়ে সুন্দর ছবি ওঠে
-
নিচের পার্কে বসে আইফেল টাওয়ারের ছায়া উপভোগ করুন
ছবি প্রস্তাবনা:
-
নিচ থেকে উপরের দিকে তোলা
-
দূর থেকে পুরো টাওয়ার সহ প্যারিস শহরের ব্যাকগ্রাউন্ড
সকাল ১১টা: লুভর মিউজিয়ামে বিশ্বের সেরা চিত্রকর্ম
লুভর শুধু একটি মিউজিয়াম নয়, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত শিল্প সংগ্রহশালা। এখানে আপনি দেখতে পারবেন মোনালিসার রহস্যময় হাসি, ভেনাস দে মাইলো, উইংড ভিক্টরি সহ হাজার হাজার শিল্পকর্ম।
কি দেখবেন:
-
মোনা লিসা
-
The Raft of the Medusa
-
পিরামিডের আকারের মিউজিয়াম প্রবেশদ্বার
টিপস:
-
অডিও গাইড নিলে ইতিহাস জানতে সুবিধা হবে
-
অন্তত ২-৩ ঘণ্টা সময় দিন
দুপুর ২টা: ফ্রেঞ্চ লাঞ্চ – বৌলংগারিতে
মিউজিয়াম দর্শনের পর প্যারিসের স্থানীয় কোনো বৌলংগারিতে ঢুঁ মারুন। এখানকার পনির, ফ্রেশ পাস্তা বা বিফ স্টেক আপনার রসনার স্বাদ অনেক বাড়িয়ে দেবে।
জনপ্রিয় খাবার:
-
কোঁক ও ভিন
-
বিফ বোর্গুইনিয়ন
-
মাশরুম স্যুপ
বিকেল ৪টা: সেইন নদীতে বোট ভ্রমণ
সেইন নদীর তীরে বসে অথবা নদীতে বোটে চড়ে আপনি প্যারিসের এক অনন্য রূপ দেখতে পাবেন। ‘Bateaux Mouches’ নামে বিশেষ ট্যুর বোট চালু রয়েছে যা আপনাকে নটর ডেম, লুভর ও অন্যান্য স্থানের পাশ দিয়ে নিয়ে যাবে।
টিপস:
-
সূর্যাস্তের আগে রাইড নিন
-
রাতে ‘ইলুমিনেশন রাইড’ অনেক বেশি রোমান্টিক
সন্ধ্যা ৬টা: নটর ডেম ক্যাথেড্রাল – গথিক স্থাপত্যের নিদর্শন
১১৬৩ সালে নির্মিত এই ক্যাথেড্রাল গথিক স্থাপত্যের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। যদিও সাম্প্রতিক আগুনে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে এর সৌন্দর্য আজও অটুট।
কি দেখবেন:
-
বিশাল গোলাকার জানালা (Rose Window)
-
পুরোনো স্ট্যাচু ও পাথরের নকশা
-
আশপাশের বুকশপগুলোও ঘুরে দেখা যেতে পারে
সন্ধ্যা ৭টা: মন্টমার্ট্র পাহাড় ও স্যাক্রে-কোয়ের বাসিলিকা
মন্টমার্ট্র প্যারিসের সবচেয়ে উঁচু জায়গা, যেখানে রয়েছে স্যাক্রে-কোয়ের বিশাল গির্জা। এখান থেকে শহরের অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়। এখানে অনেক চিত্রকর তাদের কাজ বিক্রি করেন।
ছবি তোলার সেরা স্থান:
-
স্যাক্রে-কোয়ের সিঁড়ি থেকে প্যারিসের স্কাইলাইন
-
রাস্তায় বসে আঁকা শিল্পীর সাথে ছবি
রাত ৮টা: প্যারিসের নৈশভোজ
রাতে ভালো কোনো ফ্রেঞ্চ রেস্টুরেন্টে বসে ক্লাসিক ‘ডিনার-এ-লা-ফ্রঁসেই’ উপভোগ করুন।
জনপ্রিয় খাবার:
-
র্যাটাটুই (Ratatouille)
-
ড্যাক কনফিট
-
রেড ওয়াইন ও ক্রেম ব্রুলে
রাত ১০টা: আইফেল টাওয়ারের রাতের আলো
দিনের শেষ চমক হিসেবে ফেরত যান আইফেল টাওয়ারের কাছে। প্রতি ঘণ্টায় ৫ মিনিট করে আলো ঝলমল করে ওঠে এই টাওয়ারটি। এটি দেখে মনে হবে যেন তারা ভরা কোনো আকাশ আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
দরকারি টিপস:
-
মেট্রো ব্যবহার করুন: শহরের প্রতিটি কোণায় যেতে পাবেন সাবওয়ে সার্ভিস।
-
ফরাসি কিছু শব্দ শিখে যান: Bonjour (হ্যালো), Merci (ধন্যবাদ), Au revoir (বিদায়) – এগুলো সাহায্য করবে।
-
জল ও স্ন্যাকস রাখুন: সারাদিন হাঁটতে হবে, তাই প্রস্তুত থাকুন।
-
ক্যামেরা চার্জড রাখুন: কারণ ছবি তোলার জায়গার শেষ নেই!
উপসংহার
প্যারিস কেবল একটি শহর নয়, এটি একটি অনুভূতি। প্রেম, ইতিহাস, শিল্প, ও আধুনিকতা সব একত্রে এখানে মিশে আছে। মাত্র এক দিনেই অনেক কিছু দেখা সম্ভব, তবে মনে রাখবেন – প্যারিস বারবার ফিরে আসার মতই এক অভিজ্ঞতা।