Thursday, May 9, 2024

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই ভাইয়ের দারিদ্র্য জয়

অনলাইনের মাধ্যমে আম বিক্রির ধারণা তাদের জীবন বদলে দেয়। এই দুই ভাইয়ের বাড়ি ঘাটাইল উপজেলার রতন বরিষ গ্রামের একটি দরিদ্র পরিবারে। বাবা ঢাকায় রিকশা চালান। বড় ছেলে জুয়েল মামুন (২৬) পড়েন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, আর ছোট ছেলে জাহাঙ্গীর (২২) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুই ছেলের পড়াশোনার খরচ আর চালাতে পারছিলেন না বাবা। অপর দিকে স্ত্রী ও ছোট মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। বড় ছেলে মামুন টিউশনিসহ নানা কাজ করে পড়াশোনার খরচ মেটানোর চেষ্টা করেন; কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এমন সময় আসে আমের মৌসুম।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরপরই পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিলেও কিছুদিন পর একটা স্কলারশিপ পাওয়ায় জুয়েলের আর কারো ওপর নির্ভর করতে হয়নি। বছর চারেক আগের কথা। সেবার আমের মৌসুমে ছিল পবিত্র রমজান। বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি। ফেসবুকে ‘ফ্রুট হাট’ নামে একটা পেজ খোলেন দুই ভাই। ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী সরাসরি বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে শুরু হলো কুরিয়ারে পৌঁছে দেয়া। প্রথম বছর প্রায় পাঁচ হাজার কেজি আম বিক্রি হয়েছিল।

পরের বছর নিয়ম করলেন, আগে টাকা পাঠিয়ে বুকিং দিতে হবে। সাড়া মিলল তাতেও। বিক্রি হলো প্রায় ১৫ হাজার কেজি আম। গত বছর বিক্রি হয়েছে ৩০ হাজার কেজি। এবারো তাদের কার্যক্রম চলছে পুরোদমে।মৌসুমের শুরুতেই চার হাজার কেজি গোপালভোগ পাঠিয়েছেন। রাজশাহীর পুঠিয়ার বানেশ্বর আমের বাজারে দুই ভাই আরো পাঁচজন কর্মীকে নিয়ে এ কর্মযজ্ঞ চালান। কর্মীদের একজন শুধু আমের মান নিশ্চিত করেন। অন্যরা আম ওজন করা, প্যাকেট করা, কুরিয়ারে বা গাড়িতে পাঠানোর কাজ করেন। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী আম পাঠানো হয়।

জুয়েল বলেন, ব্যবসার আয় থেকে বাড়ির মেঝে পাকা করে উপরে নতুন টিনের ছাউনি দিয়েছি। গরুর খামার রয়েছে। এ ঈদে অনলাইনের মাধ্যমে দু’টি ষাঁড় বিক্রি করেছি।

জুয়েল স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন, আলমগীর চতুর্থ বর্ষে। গত কয়েক বছর ধরে তাদের বাবাকে আর রিকশা চালাতে হয় না। জয় একটি সরকারি চাকরির লিখিত পরীক্ষায় নির্বাচিত হয়ে আছেন। চাকরিটি হলে পাশাপাশি ব্যবসাও চালাবেন। আর সরকারি চাকরি না হলে এ কাজকেই পেশা হিসেবে নেবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, প্রতি আমের সিজনে প্রায় ৩০-৩৫ টন আম বিক্রি করে থাকি এবং ১০/১১ জন শ্রমিকও এই ব্যবসায় আমাদের সাথে কাজ করেন।

জুয়েলের ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চাইলে এমকেডিআর গণ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক লুৎফর রহমান বলেন, জুয়েল দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ছেলেটি খুবই উদ্যোমী ও কর্মঠ। সে পরিশ্রম করে তার পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে এবং তার অসচ্ছল মা-বাবার পাশে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে সংসারের যাবতীয় খরচও বহন করছে।

এই সম্পর্কিত আরও খবর

সর্বশেষ আপডেট