Saturday, April 27, 2024

গ্রীষ্মকালীন বাঁধাকপি চাষে বাজিমাত

কৃষিনির্ভর জেলা মেহেরপুরের বাজারগুলোতে শ্রাবণ মাসের শুরুতেই পাওয়া যাচ্ছে বাঁধাকপি। গ্রীষ্মকালেই শীতকালীন এ সবজি চাষ করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন জেলার কৃষকরা। এতে একদিকে তাঁরা লাভবান হচ্ছেন। অন্যদিকে অর্থকরী ফসল হিসেবে এরই মধ্যে পরিচিত হয়ে উঠছে সবজিটি।

কৃষকরা বলছেন, আধুনিক কৃষি পদ্ধতি ব্যবহার করায় এখন সব ফসলেরই উৎপাদন বেড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গ্রীষ্মকালেও এখন বাঁধাকপির বাম্পার ফলন হচ্ছে। আর অসময়ের এ সবজি বাজারে পাওয়ায় ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদাও বেশ ভালো। বর্তমানে বাজারমূল্য ভালো হওয়ায় চাষিরাও লাভবান হচ্ছেন।

কৃষি বিভাগ বলছে, মূলত অল্প খরচ ও স্বল্প সময়ে ভালো ফলন হওয়ার পাশাপাশি অধিক মুনাফা পাওয়ায় মেহেরপুরের অনেক চাষিই এখন বাঁধাকপি চাষে ঝুঁকছেন। শীতকালীন সবজি গ্রীষ্মকালে চাষ করতে এবং তা বাণিজ‍্যিকীকরণ করতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।

কৃষি বিভাগের তথ‍্যমতে, চলতি মৌসুমে মেহেরপুরের তিনটি উপজেলায় প্রায় ২০০ একর জমিতে গ্রীষ্মকালীন বাঁধাকপি চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ একর বেশি। মাত্র বছর চারেক আগেই এ গ্রীষ্মকালীন সবজিটির পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়েছিল এ জেলায়। এরই মধ্যে কৃষকরা এ সবজি চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলাতে শিখে গেছেন।

গাংনী উপজেলার বালিয়াঘাট গ্রামের গ্রীষ্মকালীন বাঁধাকপি চাষ করা কৃষক ওমর ফারুক বলেন, ‘আমরা কিছু দিন আগেও চাষাবাদ করে লোকসানে পড়তাম। অথচ বতর্মানে আমাদের মাঠে অনেক সবজির চাষ হচ্ছে। কোনো চাষি যদি ভেবেচিন্তে কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে সঠিকভাবে পরিচর্যা করে ফসল ফলান, তাহলে অনেক মুনাফা পাওয়া সম্ভব। আমি এবার তিন বিঘা জমিতে বাঁধাকপির আবাদ করেছিলাম। তাতে সব খরচপাতি বাদ দিয়ে দেড় লাখ টাকা লাভ হয়েছে। আমি আগামীতে এ চাষ আরও বেশি করার চিন্তা করেছি।’

একই এলাকার চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বাঁধাকপি চাষে লাভবান হওয়া যায় ঠিকই। তবে এ সবজি চাষে খরচ একটু বেশি। বাজারে এর চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় লাভবান হওয়া যায়। এক বিঘা জমিতে কপি চাষ করতে বর্তমানে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। আর এ কপি বড় হওয়ার আগেই জেলার বাইরের ব্যবসায়ীরা এসে লাখ লাখ টাকায় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে খুচরা বাজারে এই সবজি বিক্রি করতে পারলে এক বিঘা জমি থেকে ৭০-৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।’

আরেক চাষি কামাল হোসেন বলেন, ‘গ্রীষ্মকালীন বাঁধাকপির চাষ আমি এ বছরই প্রথম করেছি। আমার দেড় বিঘা বাঁধাকপির মধ‍্যে সাথী ফসল হিসেবে কলাগাছ লাগানো আছে। কলাগাছ বড় হওয়ার আগেই বাঁধাকপি উঠে যাবে। কয়েক দিন আগে ঢাকা থেকে এক পার্টি এসে আমার বাঁধাকপি ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায় কিনে নিয়েছে। মাঝখান থেকে আমার কলাগাছগুলোও বড় হতে লেগেছে।’

ঢাকা থেকে বাঁধাকপি কিনতে আসা ব‍্যবসায়ী ওসমান বলেন, ‘আমরা তিনজন পার্টনার মিলে এ এলাকার প্রায় ৫০ বিঘা জমি থেকে বাঁধাকপি কিনে রেখেছি। গ্রীষ্মকালে এ অঞ্চলে বাঁধাকপির চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর ফলে কৃষকের পাশাপাশি আমরাও এটি শহরে বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছি। প্রতি বিঘা বাঁধাকপি প্রকারভেদে আমরা ৩৫-৪৫ হাজার টাকায় কিনছি। এক বিঘা জমিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৫ হাজার পিস পর্যন্ত বাঁধাকপি টিকে থাকে। এ অঞ্চলের বাঁধাকপি আমরা রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে পাঠিয়ে থাকি।’

জেলার ঐতিহ্যবাহী সবজির হাট বামন্দী হাটের সবজি বিক্রেতা কাঞ্চন আলী বলেন, ‘আমরা স্থানীয় বাজারে ৬০ টাকা কেজি দরে বাঁধাকপি বিক্রি করছি। মূলত, যেসব খেতের কপি শেষ পর্যায়ে থাকে, তাদের কাছ থেকে আমরা দর-কষাকষি করে কিনে আনি। প্রতি কেজি বাঁধাকপি বিক্রি করে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়ে থাকে।’

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, মেহেরপুরের আবহাওয়া ও জলবায়ু কৃষির জন‍্য বেশ উপযোগী। এখানে বছরজুড়েই প্রায় সব ধরনের সবজির চাষ হয়ে থাকে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অধিকাংশ সবজি দেশের বিভিন্ন বাজারে চলে যায়। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে এবার জেলায় ২০০ একর জমিতে বাঁধাকপির চাষ হয়েছে। আগামীতে এটি আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আধুনিক কৃষির ব‍্যবহারসহ উৎপাদিত ফসল বাণিজ‍্যিকীকরণে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতাও করা হচ্ছে।-দৈনিক বাংলা

এই সম্পর্কিত আরও খবর

সর্বশেষ আপডেট