Wednesday, July 24, 2024

রংপুরে হাঁড়িভাঙা আম বদলে দিয়েছে চাষিদের ভাগ্য

রংপুরে হাঁড়িভাঙা আম বদলে দিয়েছে অনেক চাষিদের ভাগ্য। রংপুরের মানুষ একসময় ধানের ওপর নির্ভরশীল ছিল। অনেক কৃষক পাঁচ থেকে ১০ বিঘা জমি চাষ করে কষ্টে জীবন-যাপন করতো। এখন সে জমিতে কৃষক আম চাষ করে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন।

চলতি বছর প্রায় তিন হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে সব জাতের আমের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে রয়েছে হাঁড়িভাঙা আম। যা গত বছরের চেয়ে ৪০ হেক্টর বেশি। আমের ফলন এবার গতবারের চেয়ে ভালো হওয়ায় প্রায় ৩৫ হাজার মেট্রিকটন আম উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করছি উৎপাদিত আমের বিক্রি এবার ২৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

আট থেকে ১০ বছর আগেও জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ চরম অভাবে ছিলেন। এলাকার মাটি লাল হওয়ার কারণে এখানে বছরে একবার ধান হতো। বাকি আট মাস জমি পড়ে থাকত। কিন্তু হাঁড়িভাঙা আম ভাগ্য বদলে দিয়েছে বলে জানান আমচাষি তাজুল ইসলাম।

হাঁড়িভাঙা জাতের আমকে এখন রংপুরের নতুন অর্থকরী ফসল বলা হচ্ছে। জেলার মিঠাপুকুর, রংপুর সদর, বদরগঞ্জের বিস্তৃত এলাকার হাজার হাজার কৃষক এ আম চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। পরিবারে এসেছে আর্থিক সচ্ছলতা। জেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ। এর সীমানায় পৌঁছালেই চোখে পড়ে এক নতুন দৃশ্য। পথের ধারে, প্রতিটি বাসাবাড়ির পরিত্যক্ত জায়গা, বাড়ির উঠানেও আমগাছ। সব গাছেই শ শ আম ঝুলছে। ধানি জমির আইলের চারদিকে সারি করে আমগাছ লাগানো হয়েছে।

রবিবার জেলার মিঠাপকুুরের আখিরাহাট, পদাগঞ্জ, মাঠেরহাট, বদরগঞ্জের গোপালপুর, নাগেরহাট, সর্দারপাড়া, রংপুর নগরের বড়বাড়ী, সদর উপজেলার সদ্যপুষ্করনী ইউনিয়নের কাঁটাবাড়ি এলাকায় গিয়ে একই দৃশ্য দেখা যায়।

কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, এক দোন (২৪ শতক) জমিতে ধান আবাদ করতে পানি, সার, হাল-চাষ, শ্রমিক এবং কাটা-মাড়াই করতে কমপক্ষে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা লাগে। খুব ভালো আবাদ হলে এই জমিতে ধান হয় ২০ মণ, যার মূল্য ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। অপরদিকে এক দোন জমিতে আমগাছ থাকে ৪০ থেকে ৪৫টি। কীটনাশক, সার আর শ্রমিকসহ খরচ হয় সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। আম বিক্রি হয় সর্বনিম্ন ৪০ হাজার টাকায়।

আজহারুল ইসলাম নামের এক আমচাষি বলেন, আমি কৃষিকাজ করতাম। এখন হাঁড়িভাঙা আমের ব্যবসা করি। গত বছর পাঁচ একর জমির আম আগাম কিনে ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। এবার ১০ একর জমির আম কেনা হয়েছে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে ৫০ লাখ টাকার আম বিক্রি করতে পারব।

এ অঞ্চলে হাঁড়িভাঙা আমকে ঘিরে বেকারের সংখ্যাও অনেকটা কমে গেছে। বিশেষত মিঠাপুকুরের লালপুর, পদাগঞ্জ, তেয়ানিসহ আশপাশের গ্রামের বেকার যুবকরা এখন আম ব্যবসায় জড়িয়ে বেকারত্ব দূর করেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, রংপুরে এখন ব্যাপকভাবে হাঁড়িভাঙা আম চাষ হচ্ছে। জুন মাসের শুরুর দিকে হাঁড়িভাঙা আম বাজারে আসতে শুরু করবে। কৃষি বিভাগ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে।

এই সম্পর্কিত আরও খবর

সর্বশেষ আপডেট