Friday, April 19, 2024

৩-৬ মাসে বিসিএস প্রিলির প্রস্তুতি

সামনে ৪৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর শেষ করে প্রার্থীরা প্রিলির আগ পর্যন্ত প্রস্তুতি নিতে পারেন। অনেকেই তিন থেকে ছয় মাস বা তারও বেশি সময় পান। এই সময়টাতে প্রস্তুতির রুটিন ও কৌশল নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ৩৫তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা রবিউল আলম লুইপা।

যেকোনো বিষয়ে প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে প্রথম থেকেই সময় বেঁধে টার্গেট করে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। এর জন্য প্রথমে ঠিক করতে হবে একটি বিষয় কত দিনে শেষ করতে চাচ্ছেন! যদি পরিকল্পনা ছাড়া এক দিক থেকে এক-দুই পৃষ্ঠা করে পড়তে থাকেন, তাহলে আপনার প্রস্তুতি কোনো দিনও শেষ হবে না বা পাকাপোক্ত হবে না।

প্রস্তুতির পদ্ধতি

বিসিএস প্রিলিতে একজন প্রার্থীকে মোট ছয়টি বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে হয়—বাংলা (ভাষা ও সাহিত্য), ইংরেজি (ভাষা ও সাহিত্য), গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা, সাধারণ বিজ্ঞান কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি, বাংলাদেশ বিষয়াবলি (ভূগোল ও নৈতিকতা) এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি। পিএসসির দেওয়া প্রিলিমিনারি সিলেবাসে কোনো বিষয়েরই অধ্যায়/টপিক সুনির্দিষ্ট করা হয়নি।

তাই প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির জন্য অধ্যায় হিসাব না করে পৃষ্ঠা হিসাব করে প্রতিদিন পড়তে হবে। প্রস্তুতির শুরুতে ভালো কোনো প্রকাশনীর (প্রথম সারির সব প্রকাশনীর বই প্রায় একই মানের) বিষয়ভিত্তিক প্রিলি গাইড সংগ্রহ করুন।

গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা বিষয়টি প্রতিদিন দুই-তিন ঘণ্টা করে অনুশীলন করতে হবে। বাকি পাঁচটি বিষয়ের গাইড বই থেকে প্রতিদিন একটি বইয়ের ২৫-৫০ পৃষ্ঠা করে পড়ার চেষ্টা করবেন। যেমন—বাংলাদেশ বিষয়াবলি গাইডটি যদি ৭০০ পৃষ্ঠার হয়, প্রতিদিন ৫০ পৃষ্ঠা হিসাবে এই বইটি শেষ করতে ১৪ দিন সময় লাগবে। আপনার হাতে তিন মাস সময় থাকলে প্রতিদিন ৫০ পৃষ্ঠা করে পড়তেই হবে। আর হাতে ছয় মাস সময় থাকলে একটু সময় নিয়ে প্রতিদিন ২৫ পৃষ্ঠা করেও পড়তে পারেন। এই পদ্ধতি গণিত ছাড়া বাকি পাঁচটি বিষয়ের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে অনুসরণ করতে পারেন।

প্রস্তুতি কয় মাসে?

কত দিন পড়াশোনা করলে প্রিলি পাস করা সম্ভব—এটি নির্ভর করছে একজন প্রার্থীর বেসিক জ্ঞান ও পড়া আত্মস্থ করার সক্ষমতার ওপর। দুই-তিন মাস পড়ে প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ প্রার্থীর সংখ্যা যেমন কম নয়, এক বছর পড়েও ফেল করেছেন এমন নজিরও বহু আছে। তবে সাধারণত পাঁচ-ছয় মাস পড়াশোনাই প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট বা আদর্শ সময়। বিসিএস প্রিলির জন্য পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিলে এর পাশাপাশি বাকি প্রায় সব সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতিও হয়ে যাবে!

প্রিলি প্রস্তুতির রুটিন

প্রিলি প্রস্তুতির নমুনা রুটিনের মতো প্রতিটি বিষয় শেষ করতে কত দিন সময় নেবেন, সেটি নির্ধারণ করুন। তাহলে প্রতিদিন কতটুকু পড়তে হবে, সেটিও হিসাব করতে পারবেন। যেমন—বাংলা ভাষা ও সাহিত্য শেষ করতে হবে ১৫ দিনে। এই বইতে যদি ১৫টি অধ্যায় থাকে, তাহলে প্রতিদিন একটি করে অধ্যায় শেষ করতে হবে। অথবা এই বইটি যদি ৯০০ পৃষ্ঠার হয়, তাহলে প্রতিদিন ৬০ পৃষ্ঠা করে পড়তে হবে।

দিনে কয় ঘণ্টা পড়াশোনা

নতুন প্রার্থীদের মধ্যে কমন একটি জিজ্ঞাসা হচ্ছে, বিসিএসের প্রস্তুতিতে সাধারণত প্রতিদিন কত ঘণ্টা পড়াশোনা করা উচিত। এটি প্রার্থীর অবস্থা, মেধার সক্ষমতা ও সময়ের প্রাপ্যতার ওপর নির্ভর করে। যিনি একদম বেকার, তিনি সারা দিন পড়াশোনার সময় পাবেন। তবে চাকরিরত প্রার্থীর পক্ষে সময় বের করাই কঠিন! আপনি যে অবস্থায়ই থাকুন, সফল হতে হলে হাতে পাওয়া সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এই কাজটি করতে হলে সময়, কাজ ও পড়ার সঙ্গে সমন্বয় করে নিতে হবে।

প্রিলির বুকলিস্ট

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে বিসিএস প্রস্তুতির বুকলিস্ট সাজেস্ট করেন। অনেক সময় একেকজন একেকটা বইকে প্রাধান্য দেন। ফলে নতুন প্রার্থীদের অনেকেই দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন! এ ক্ষেত্রে প্রথম অবস্থায় কম বই নিয়েই প্রস্তুতি শুরু করা যায়। লিখিত পরীক্ষায় তথ্য, উপাত্ত, গ্রাফ, চার্টের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পাঠ্য বই বা রেফারেন্স বইয়ের প্রয়োজন আছে। তবে যেকোনো একটি প্রকাশনীর প্রিলি সিরিজের ছয়টি গাইড বই পড়েই পরীক্ষায় পাস করা সম্ভব। স্কুল-কলেজের পাঠ্য বই থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংকলন করেই প্রকাশনীর গাইড বইগুলো করা হয়। তাই একই বিষয়ে একাধিক বই পড়ার চেয়ে যা পড়বেন তা-ই বেশি বেশি পড়ুন। প্রয়োজনে একটি বই-ই একাধিকবার পড়ুন।

প্রিলি পাসের কৌশল

  • একটি বিষয়ের জন্য একটি বই পুরোপুরি (সম্ভব হলে একাধিকবার) পড়ুন।
  • কোনো একটি বিষয়ে অধিক পারদর্শী হয়ে অন্য বিষয়ে দুর্বল হওয়ার চেয়ে সব বিষয়ে অলরাউন্ডার হওয়ার চেষ্টা করুন।
  • বিগত প্রশ্ন অ্যানালিসিস করে বারবার আসা অধ্যায়গুলো গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তুতি নিন।
  • নিয়মিত বিষয়ভিত্তিক মডেল টেস্ট এবং পরীক্ষার আগে একাধিক চূড়ান্ত মডেল টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে নিজের ভুলগুলো খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সংশোধন করুন।
  • পরীক্ষার হলে সময় বণ্টন করুন আর প্রশ্নের সঙ্গে সমন্বয় করে নিন।
  • নেগেটিভ মার্কিংয়ের ব্যাপারে যতটা সম্ভব সতর্ক থাকুন।

প্রিলিতে ফেলের কারণ

  • বেশিসংখ্যক নেগেটিভ মার্কিং।
  • পরীক্ষার হলে সময়ের অব্যবস্থাপনা।
  • গুরুত্বপূর্ণ টপিক বাদ দিয়ে অগুরুত্বপূর্ণ টপিকের ওপর প্রস্তুতি।
  • একাধিক বই পড়তে গিয়ে কোনোটিই সম্পূর্ণ না করা।
  • পরীক্ষার আগে পুরো রিভিশন দিতে না পারা।
  • ভাসা ভাসা জ্ঞানে প্রস্তুতি নেওয়া।

এই সম্পর্কিত আরও খবর

সর্বশেষ আপডেট