Thursday, April 18, 2024

লিচুর ফলনে চাষির হাসি

চাষিরা বলছেন, অতিরিক্ত খরার কারণে চলতি মৌসুমে সময়ের আগেই লিচু পেকেছে। যে কারণে আকার তুলনামূলক ছোট হয়েছে। তবে ফলন ভালো হওয়ায় এবার লাভের মুখ দেখার আশা করছেন তাঁরা। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ সময়ে বাজারে আসে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের বিখ্যাত লিচু। এবারও ব্যতিক্রম নয়।

গতকাল শুক্রবার উপজেলার পানাম গাবতলী গ্রামের লিচু চাষি আব্দুল ওহাব মিয়া বলেন, এ বছর অতিরিক্ত খরার কারণে লিচুর প্রচুর পরিমাণ মুকুল নষ্ট হয়েছে। তবে দু-একদিন বৃষ্টি হওয়ায় আগের বছরের তুলনায় ভালো ফলন হয়েছে। যে কারণে বেশি দামে তিনি বাগান বিক্রি করেছেন।

তিনি আরও বলেন, তাঁদের ব্যবসা পুরোপুরি ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল। এ বছর লিচুর দাম তুলনামূলকভাবে ভালো। কৃষকরাও অন্যান্য বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।

এদিকে চাষিরা জানিয়েছেন, উপজেলার ছোট-বড় মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক বাগান রয়েছে। সাধারণত কদমী, মোজাফফরপুরী, চায়না-৩, এলাচি, পাতি– এ পাঁচ ধরনের লিচুর চাষই বেশি হয়। তবে আকারে বড় ও বেশি রসালো হওয়ায় কদমী জাতের লিচু চাষে আগ্রহ বেশি চাষিদের। এবার প্রতি ১০০ কদমী লিচু ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি ১০০ পাতি লিচুর বর্তমান বাজারদর ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।

জানা গেছে, মোটামুটি মানের একটি বাগানের লিচু বছরের চার থেকে পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি করা যায়। যে কারণে অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে অনেকেই লিচু চাষে ঝুঁকছেন। সোনারগাঁ পৌরসভা, বৈদ্যেরবাজার, মোগরাপাড়া, বারদী, সনমান্দি ও সাদিপুর ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে লিচু বাগানের সংখ্যা বেশি। তবে পৌর এলাকার সর্দারবাড়ী, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, বাড়িমজলিশ, দিঘিরপাড়, পানাম, অর্জুন্দি, বাগমুছা, দত্তপাড়া, ইছাপাড়া, কৃষ্ণপুরা, হাড়িয়া, সাহাপুর, পানাম গাবতলী, ষোলপাড়া, ভট্টপুর এলাকায় উৎপাদিত লিচুর মান উৎকৃষ্ট বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

গাবতলী গ্রামের তাইজুল ইসলাম ও তাঁর পাঁচ ভাইয়ের ছয়টি লিচু বাগান রয়েছে। তাইজুল বলেন, শৈশব থেকেই লিচু চাষ করছেন। তাঁর ২ বিঘা জমির বাগানে ৬৫টি লিচুগাছ রয়েছে। তাঁর ভাষ্য, এ বছর বেশি গরম পড়ায় লিচু আগে পেকে গেছে। তবে আকারে তেমন বড় হয়নি।

প্রতি মৌসুমে তাঁর বাগানের লিচু সবার আগে বাজারে যায় জানিয়ে তাইজুল বলেন, এবার লিচু আকারে ছোট হলেও আশা করছেন আগের ২ বছরের তুলনায় ভালো দাম পাবেন। অন্য বাগান মালিক আলী হোসেনের আশা ছিল, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার লিচুতে বেশি লাভবান হবেন। তবে আকারে ছোট হওয়ার দাম বেশি পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত তিনি। সারসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ায় এবার লাভ বেশি না হলে বিকল্প খোঁজারও চিন্তা করছেন।

সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা বলেন, গত বছরের তুলনায় ফলন এবার ভালো। তবে বৃষ্টিপাত তেমন না হওয়ায় লিচু তেমন বড় হয়নি। তবে লিচু বিক্রি করে চাষিরা লাভবান হবেন– এমন আশা করছেন। মুকুল আসা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে লিচু চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এই সম্পর্কিত আরও খবর

সর্বশেষ আপডেট