Tuesday, April 23, 2024

গরুর বদলে বুক দিয়ে তেল ভাঙানোর কাঠের ঘাঁনি টানেন এই স্বামী-স্ত্রী

প্রতিদিন কাক ডাকা ভোর থেকে চলে তাদের কর্মকাণ্ড। দুই যুগের বেশি সময় ধরে তারা পরিবার এবং নিজেদের বেঁচে থাকার তাগিদে এভাবে ঘাঁনি টেনে চলেছেন। গরুর বদলে বুক দিয়ে তেল ভাঙানোর কাঠের ঘাঁনি টানেন আবুল কালাম আজাদ ও আসমা খাতুন নামে এক দম্পতি।

এর মাধ্যমেই চলে তাদের সংসার। তাদের বাড়ি সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নের শ্রীদাসগাঁতী গ্রামে। কাকডাকা ভোর থেকে কাঠের ঘানির ওপর কয়েকটি ভারি পাথর চাপিয়ে ঘুরতে থাকেন আবুল কালাম আজাদ ও আসমা খাতুন দম্পতি। এভাবে তারা সরিষা থেকে ঘাঁনির মাধ্যমে ফোটায় ফোটায় তেল বের করেন। শরীর না পারলেও কেবল পেটের তাগিদে সকাল থেকে কত পাক যে তাদের ঘাঁনি ঘুরাতে হয় তার হিসাব জানা নেই।

তারা জানে কেবল ঘাঁনির চাকা ঘুরলেই দিন শেষে পরিবারের সবার মুখে একমুঠো খাবার জুটবে। এভাবেই তারা প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে গরুর বদলে নিজেরাই ঘাঁনি ঘুরান। যে বয়সে তাদের বিশ্রাম নেয়ার কথা, সেই বয়সেই গরুর বদলে টানছেন ঘাঁনি। পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে তারা এ কাজ করছেন। ঘাঁনি টানার অমানুষিক পরিশ্রম করে অনেকটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তারা। দিনের পর দিন এভাবে ভারি ঘাঁনির চাকা ঘুরালেও তাদের ভাগ্যর চাকা ঘোরেনি আজও।

ভাঙা ঘরে সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। দুই সন্তান বড় হয়ে বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছে। বাবা মায়ের ঘাঁনি ভাঙানো আয়ে তারা বড় হলেও এখন তারা তাদের দায়িত্ব নিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে এই দম্পতি ঘাঁনির বোঝা টেনে চলেছে নীরবে। কবে তারা এই বোঝা থেকে মুক্ত হবে? তা জানা নেই তাদের।

রায়গঞ্জ উপজেলার শ্রীদাসগাঁতী গ্রামে গিয়ে দেখা জায়, একটি ঝুপড়ি ঘরে ঘাঁনির চাকায় কয়েকটি পাথর বসিয়ে ঘুরাচ্ছেন আবুল কালাম আজাদ ও তার স্ত্রী আসমা খাতুন। আবুল কালাম আজাদ জানান, অপুষ্টি আর শারীরিক অসুস্থতার কারণে এখন ঠিক মতো ঘাঁনি টানতে পারেন না। তবুও এই ঘাঁনি টেনেই তিনি ৬ সন্তানকে মানুষ করেছেন। প্রতিদিন ফজর আজান থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত তারা দুই দফায় ৮ কেজি সরিষা ঘাঁনিতে ভাঙান। এ থেকে আড়াই কেজি তেল বের হয়।

সেই তেল ৪শ’ টাকা কেজি দরে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করেন। আর ৫০ টাকা কেজি দরে খৈল বিক্রি করেন। এ থেকে প্রতিদিন তাদের ২৫০ টাকা আয় হয়। তা দিয়ে এখন ৩ ছেলে এবং স্বামী-স্ত্রীর খাবার জোটে। দ্রব্যমূল্যের বাজারে এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। খুব কষ্টে দিন পার করছেন তারা।

আবুল কালামের স্ত্রী আসমা খাতুন জানান, বিয়ের পর থেকে ঘাঁনি টেনে যাচ্ছি। বয়স বেড়ে যাওয়ায় এখন আগের মতো ভারি ঘাঁনি টানতে পারি না। মাথা ঘোরে। পা চলে না। মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়ি। তবুও পেটের তাগিদে ঘাঁনি টানি। একটু সাহায্যর জন্য কত ঘুরেছি। কেউ হাত বাড়ায়নি।

রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৃপ্তি কণা মন্ডল জানান, এভাবে শরীর দিয়ে দম্পতির ঘাঁনি টানার বিষয়টি তার জানা নেই। তারা আমাদের কাছে আবেদন করলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সহযোগিতা করা হবে।

এই সম্পর্কিত আরও খবর

সর্বশেষ আপডেট