Friday, March 29, 2024

মরুভূমির সাম্মাম ফল চাষে সফল ঠাকুরগাঁওয়ের মোন্নাফ

৭৫ শতক জমিতে সাম্মাম ফলের আবাদ করে এখন পর্যন্ত মোন্নাফ দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় করেছেন। সাম্মাম বা রকমেলন ফলটি সর্বনিম্ন ৫০০ গ্রাম থেকে ৪ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়। ফলটি প্রতিকেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি হয় বাজারে। পাইকারিভাবে বিক্রি হয় ৬০-৮০ টাকা দরে।

মরুভূমির ফল ‘সাম্মাম’। দেখতে অনেকটা তরমুজের মতো। বাংলাদেশে অনেকেই এই ফলটিকে ‘রকমেলন’ নামে চেনেন। দেশের মাটিতে এ ফল চাষ করে লাভবান হয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক মোন্নাফ আলী মন্ডল।

আশপাশের কৃষক ও এলাকাবাসী নতুন জাতের এ ফল উৎপাদনের খবর পেয়ে দেখতে আসছেন। অনেকেই নতুন জাতের এ ফল চেখে দেখছেন, কেউবা কিনেও নিয়ে যাচ্ছেন। জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মোন্নাফ আলী মন্ডল।

গত বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, তরমুজ চাষের মতো করে তৈরি করা হয়েছে সারিবদ্ধ মাটির ঢিপি। দূর থেকে দেখে যে কেউ মনে করবেন এটা তরমুজ খেত; কিন্তু কাছে যেতেই বোঝা গেল এটি তরমুজ সাদৃশ নতুন জাতের ‘সাম্মাম’ ফল। মাটির ওপরে মালচিং বিছিয়ে ‘সাম্মাম’ ফলের চারা রোপণ করা হয়েছে সেখানে। আর ছিদ্রকরা মালচিংয়ের ফাকা দিয়ে গজিয়ে উঠেছে ‘সাম্মাম’ ফলের গাছ।

কৃষক মোন্নাফ আলী মন্ডল বলেন, তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ তরমুজ চাষ করে আসছেন। তবে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে মরুভূমির ফল ‘সাম্মাম’ চাষ দেখতে পান তিনি। এ থেকেই সাম্মাম ফল চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন মোন্নাফ। চুয়াডাঙ্গার এক পরিচিত কৃষকের কাছ থেকে সাম্মাম ফলের বীজ সংগ্রহ করেন। এর পর সেসব বীজ থেকে তিনি বাড়িতে চারা তৈরি করেন।

মোন্নাফ আলী বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রাথমিকভাবে ৭৫ শতক জমিতে সাম্মাম ফলের চারাগুলো রোপণ করা হয়। তরমুজের মতো করে মাটিতেই এই ফলের চাষ করা হয়। জমিতে রোপণের দেড় মাসের মধ্যেই গাছে ফল আসতে শুরু করে। তিন মাসের মধ্যেই পরিপক্ব হয় মরুভূমির ফল ‘সাম্মাম’। এই ফলের বীজ, চারা তৈরি, জমি চাষ, কীটনাশক ও শ্রমিকসহ আনুসঙ্গিক প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা খচর হয়েছে।

মাত্র তিন মাসের মধ্যে ফলটি বাজারজাত করা শুরু হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন বাজারে এসব বিক্রি করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দুই লাখ ৫০ হাজার টাকার সাম্মাম ফল বিক্রি করেছেন। ক্ষেতে যে পরিমাণ ফল রয়েছে এ থেকে আরও দুই লাখ টাকার বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তিনি আরও জানান, আগে ঢাকার কারওয়ানবাজারে নিয়ে ‘সাম্মাম’ ফলটি বিক্রি করেছি। এখন ক্ষেত থেকেই ঢাকার পাইকার এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

পীরগঞ্জ থেকে আসা সিরাজুল ইসলাম বলেন, মানুষের মুখে শুনতে পেয়ে মোন্নাফ ভাইয়ের সাম্মাম খেতে এসেছি। এখান থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৩ কেজি ওজনের ৪টি সাম্মাম ফল কিনলাম। এতে খরচ হয়েছে মাত্র ২৮০ টাকা।

স্থানীয় কৃষক জয়নাল হক বলেন, মোন্নাফ আলী মন্ডল সবসময় নতুন জাতের ফল চাষ করে থাকেন। এবারও তিনি মরুভূমির একটি ফল চাষ করেছেন। তার খেতে ফলনও ভালো হয়েছে। আমরা তার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছি কীভাবে এটি চাষ করা যায়। সামনের মৌসুমে আমরাও এই ফল চাষ করব বলে আশা করছি।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা এই ফলেল চাষ সম্প্রসারণ করলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। মধ্যপাচ্যে ‘সাম্মাম’ ফলটি বেশ জনপ্রিয়। আমাদের দেশে এটি নতুন এলেও বিভিন্ন সুপার শপে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর ঠাকুরগাঁওয়ের আবহাওয়া ‘সাম্মাম’ চাষে উপযোগী। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কৃষকদের এই বিষয়ে যথাযথ সহায়তা করা হবে।

এই সম্পর্কিত আরও খবর

সর্বশেষ আপডেট