Thursday, March 28, 2024

গাবুড়া বাজারে প্রতিদিন কোটি টাকার টমেটো কেনাবেচা হয়!

দিনাজপুর ও চিরিরবন্দরের সড়কের পাশে বসা এই বাজারে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা ট্রাক ভর্তি করে টমেটো নিয়ে যান। দিনাজপুরের সদর উপজেলার গাবুড়া বাজারে প্রতিদিন কোটি টাকার টমেটো বিক্রি হয়। স্থানীয় সহ আশের পাশের উপজেলা থেকেও কৃষকরা এই বাজারে তাদের উৎপাদিত টমেটো বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন।

দিনাজপুর-চিরিরবন্দরের নদীর তীর থেকে মাস্তান বাজার পর্যন্ত এক কিলোমিটার জুড়ে সড়কের দুই পাশেরই এই বাজার বসে। এই বাজারে পাশের বসতবাড়িতেও অস্থায়ী আড়ত বানানো হয়েছে। ভোরবেলা থেকে চাষিদের আসা শুরু হয়। বর্তমানে বাজারে বিপুল প্লাস জাতের টমেটো প্রতি মণ ৭০০-৮০০ টাকা, রাণী জাতের ৭২০-৭৫০ এবং পভলিন সিট জাতের ৫০০-৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তারপর ঢাকা, ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ফেনী, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেল থেকে প্রায় শতাধিক পাইকার এসে এখান থেকে টমেটো নিয়ে যান।

ভোরবেলা থেকে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত টমেটো নিয়ে বাজারে চলে আসেন। তারপর পাইকারদের সাথে চলে দর কষাকষি। তারপর ১০-৩০ জন শ্রমিক তা বাছাই করে ক্যারেটে ভর্তি করে ট্রাকে তুল দিচ্ছেন। পাইকাররা টমেটো কিনে আড়তেই ঢালছেন।

গত বছর এই জেলায় ৯৫৫ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদের মাধ্যমে ৪৬ হাজার ৫৫৩ মেট্রিক টন টমেটো উৎপাদন হয়েছিল। এবার সেটা বেড়ে ১ হাজার ১০২ হেক্টর জমিতে টমেটো আবাদ হয়েছে। এই জেলার উৎপাদিত ৬০ ভাগ টমেটোর চাষ হয় সদর উপজেলা, চিরিরবন্দর ও বীরগঞ্জ উপজেলায়। আর প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

চিরিরবন্দর উপজেলার কাউগা এলাকার কৃষক জহিরুল ইসলাম বলেন, গত বছরের তুলনায় এবছর বেশি ফলন পেয়েছি। এবছর ফলনের পাশাপাশি দামও ভালো। আমি ৩ বিঘা জমিতে মাটি রাণী ও বিপুল প্লাস জাতের টমেটো লাগিয়েছিলাম। সকল খরচ বাদ দিয়ে ৩ লাখ টাকা লাভ থাকবে। শুরুতেই ৬০০-৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে পারছি।

সদর উপজেলার কিষাণ বাজার এলাকার টমেটো চাষি মকবুল হোসেন বলেন, চলতি বছর আমি ১ বিঘা জমিতে টমেটোর চাষ করেছি। জমিতে ৩৫০-৪০০ মণ টমেটোর উৎপাদন হয়। বর্তমানে বাজারে টমেটোর ৭০০-৮০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। এই দামে পুরো জমির টমেটো বিক্রি করতে পারলে তিনগুণ লাভবান হবো। আর পরে যদি দাম কমে ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি করি তাহলেও লোকসান হবে না।

ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে আসা পাইকার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এই জেলায় এবছর টমেটোর ব্যাপক ফলন ভালো হয়েছে। আমি প্রতিদিন ঢাকায় ২-৩ ট্রাক মাল পাঠাতে পারছি। অন্যান্য জেলার টমেটোর সরবরাহ কমে গেছে। এই অঞ্চলের টমেটো একটু দেড়িতে উঠে তাই এখান থেকে নিতে আসছি।

রাজবাড়ী থেকে টমেটো কিনতে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি প্রায় ১২ বছর যাবত এই বাজার থেকে টমেটো কিনে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ দিচ্ছি। এখানকার কৃষকদের সাথে আলাদা সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। এই সম্পর্কের কারণে আমরা অনেক কৃষককে আর্থিকভাবে সহযোহগিতা করে থাকি। এবছরই তিনজনকে প্রায় ৩ লাখ টাকার দিয়েছি।

গাবুড়া বাজার কমিটির ইজারাদার শেখপুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম বলেন, এই অঞ্চলের টমেটোর চাহিদা পুরো দেশে রয়েছে। এই বাজারটি অনেক বড় একটি বাজার। মৌসুমে এই বাজার থেকে প্রতিদিন ৬০টিরও বেশি ট্রাক ভর্তি হয়ে টমেটো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, দেশে টমেটোর চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি চাষিদের মধ্যে এর চাষেরও আগ্রহ বাড়ছে। এই অঞ্চলের চাষিরা নাবি, বিপুল প্লাস, রাণী জাতের টমেটোর চাষ করে থাকেন। আশা করছি কৃষকরা লাভবান হতে পারছেন। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও ফসলের রোগবালাই কম হওয়ায় ভালো ফলন হয়েছে।

এই সম্পর্কিত আরও খবর

সর্বশেষ আপডেট