Tuesday, April 16, 2024

গাছে গাছে রসাল লিচু

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের মানুষ তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করে নিয়েছেন লিচু চাষ করে। লিচুর গুণেই গ্রামটির পরিচিতি এখন দেশব্যপি। অন্য এলাকার লিচুর চেয়ে এই গ্রামের লিচুর আলাদা একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই লিচু মুখে দিলেই মিষ্টি ঘ্রাণে আর মধুর রসে মন-প্রাণ ভরে যায়। মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামটি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার পুবে। অনেকেই লিচুর গ্রাম হিসেবেই চিনে মঙ্গলবাড়িয়াকে।

এ গ্রামের লিচু আগাম জাতের এবং বিঁচি ছোট হওয়ায় দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। লিচুগুলো দেখতে গোলাপি রঙের, শাঁস মোটা ও রসে ভরপুর। খেতে যেমন মিষ্টি, ঘ্রাণেও অতুলনীয়। সরেজমিন মঙ্গলবাড়িয়া ঘুরে দেখা যায়, গাছে গাছে লিচুর গোলাপি রঙে ও ঘ্রাণে ম ম করছে পুরো গ্রাম। গ্রামের প্রতিটি বাড়ির ভিটায় বা আঙ্গিনায় লিচুগাছ রয়েছে। গাছভর্তি থোকায় থোকায় বাহারি লিচুতে রঙিন হয়ে আছে পুরো গ্রাম। লিচুর মিষ্টি গন্ধে মন কাড়ছে সবার। সেই সাথে ছোট পাখিদের আনন্দ ও কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত হয়ে আছে।

স্থানীয়রা জানায়, শতাধিক বছর আগে ব্রিটিশ শাসনামলে এক ব্যক্তি চীন থেকে কয়েকটি লিচুর চারা এনে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে রোপণ করেন। সেই থেকে ‘মঙ্গলবাড়িয়া জাত’ নামেই পরিচিতি পায় এই মিষ্টি-সুস্বাদু লিচুগুলো। পর্যায়ক্রমে এ বাড়ি থেকে ও বাড়িতে সম্প্রসারিত হতে থাকে এই জাতের লিচুর চাষ। বর্তমানে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় কমপক্ষে ৮-১০টি করে লিচু গাছ আছে। পাইকাররা প্রতি বছর এখান থেকে লিচু কিনে নিয়ে যান ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

অন্যান্য এলাকার লিচুর চেয়ে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর স্বাদ আলাদা হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন এ গ্রামে এসে ভিড় জমায় লিচু কেনার জন্য। প্রবাসীরাও মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু নিয়ে যায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। গাছে মুকুল আসার আগেই গাছের মালিককে অগ্রিম টাকা দিয়ে পুরো লিচুগাছটি কিনে নিয় স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ব্যাপারিরা।

মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের লিচু চাষি সুমন মিয়া জানান, আমার ৫৫টি লিচুগাছ এ বছর মুকুল আসার সাথে সাথেই অগ্রিম ক্রয় করে দিয়েছি। আমার খরচ হয়েছে তিন লাখ টাকার মতো। লিচুর ফলন এবার খুবই ভালো হয়েছে। প্রায় সাত-আট লাখ টাকা বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছি।

পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নূর-ই-আলম জানান, মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের লিচুর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওই গ্রামের মাটি এঁটেল দোঁআশ মিশ্রিত, যা লিচু চাষের জন্য উপযুক্ত। এই বছর লিচুর মুকুল আসার আগেই ওই গ্রামের কৃষকদেরকে নিয়ে আমরা একটি সভা করি। প্রয়োজনীয় সার-কীটনাশক ব্যবহার সম্পর্কে তাদেরকে ধারণা দেই। এ বছর গ্রামের প্রায় আট হাজার লিচুগাছ থেকে ৮-১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই সম্পর্কিত আরও খবর

সর্বশেষ আপডেট