সৌম্য জ্যোতি অভিনীত ‘দুঃসাহসী খোকা’ মুক্তি পেয়েছে গত শুক্রবার। মুশফিকুর রহমান গুলজার পরিচালিত অনুদানের এ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়েছে তাঁর। চলচ্চিত্রে অভিষেক, অভিনয় নিয়ে ভাবনা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হলো তাঁর সঙ্গে–
চলচ্চিত্রে অভিষেক হলো, কেমন লাগছে?
‘দুঃসাহসী খোকা’ ছবিটি মুক্তির পর এখনও ঘোরের মধ্যে আছি। যে ছবি নিয়ে দিনের পর দিন কাজ করেছি, সবার সঙ্গে ভালো কিছু তুলে ধরার চেষ্টায় ছিলাম, এটি দর্শক এখন দেখছেন। এসব ভেবে অন্য রকম এক অনুভূতি হচ্ছে, যা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। ছোটবেলায় দেয়ালে দেয়ালে ‘মনপুরা’ সিনেমার পোস্টার সাঁটাতে দেখেছি। এখন নিজের ছবিসংবলিত পোস্টার দেখছি– সবকিছু মনে হচ্ছিল স্বপ্নের মতো। যখন টিকিট কাটতে গেলাম, তখন নিজের সিনেমার নাম দেখে অন্য রকম ভালো লেগেছে। কাছের মানুষজন যখন সিনেমাটির প্রশংসা করতে শুরু করল, তখন ভালো লাগা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল।
দর্শকের সঙ্গে নিজের সিনেমা দেখার অনুভূতি কেমন ছিল?
আনন্দের পাশাপাশি একটু ভয়ও কাজ করছিল। তা হলো, ছবিটি নিয়ে দর্শকের প্রতিক্রিয়া কী হবে এই ভেবে। ছবি শেষে দেখলাম অনেকেই কাজের প্রশংসা করছেন। সিনেমার অনেক মানুষের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছি। পরে ভয় কেটে গেছে। সবে তো মুক্তি পেল ছবিটি। দর্শক প্রতিক্রিয়া পুরোপুরি জানতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্সে প্রথম দিন প্রথম শো দেখেছি।
ছবিটি কম হলে মুক্তি পেয়েছে, মন খারাপ হয়নি?
এখনও শাহরুখ খানের ‘জওয়ান’ চলছে। ‘অন্তর্জাল’ও এসেছে। হল কম পাব সেটা আগেই জানা ছিল। এ কারণে মন খারাপ হয়নি। তবে সিনেপ্লেক্সের সব হলই পেয়েছি। আগামী সপ্তাহে ঢাকার বাইরে আরও হল বাড়বে বলে জেনেছি।
সৌম্য জ্যোতি থেকে ‘দুঃসাহসী খোকা’ হয়ে ওঠার জার্নি কেমন ছিল?
সফরটি অসাধারণ। চরিত্রের জন্য যে প্রস্তুতির দরকার তা নিতে পেরেছি। যে কোনো সত্য ঘটনাকে পর্দায় তুলে ধরা চ্যালেঞ্জিং। সে ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর মতো এত বড় একজন নেতার চরিত্রে অভিনয় আরও বেশি চ্যালেঞ্জের। বঙ্গবন্ধুর কিশোরবেলার রেফারেন্স খুব বেশি নেই। তবে প্রচুর ভিডিও দেখেছি, বই পড়েছি। অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা পড়েছি। আর্কাইভে ফুটেজ দেখেছি। আমার তরফ থেকে শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কতটুক পেরেছি, তা দর্শকই ভালো বলতে পারবেন।
অভিষেক হলো, এখন বড় পর্দায় নিয়মিত কাজ করতে দেখা যাবে?
দর্শকের ভালোবাসা আর ভালো কাজের সুযোগ পেলে সিনেমায় নিয়মিত কাজ করব। সবকিছু নির্ভর করে দর্শকের ওপর। তাদের কতটা মনোযোগ কাড়তে পারব, সময়ই বলে দেবে। এর আগে নিজেকে যোগ্য অভিনেতা হিসেবে প্রমাণ করতে হবে। এ বছরই আমার অভিনীত ‘নকশীকাঁথার জমিন’ ও ‘দাওয়াল’ ছবি দুটি মুক্তি পাবে। এর বাইরে নতুন কোনো সিনেমায় যুক্ত হইনি। এ দুটি সিনেমা আগে মুক্তি পাক; দর্শক আমার কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করে এটা বুঝি। এরপর জেনেবুঝে নতুন সিনেমার কাজে হাত দেব।
সিনেমা দুটি নিয়ে কেমন আশাবাদী?
খুবই আশাবাদী। প্রথম সিনেমা হিসেবে ‘দুঃসাহসী খোকা’ মুক্তি পেলেও আমার প্রথম অভিনীত সিনেমা ‘নকশীকাঁথার জমিন’। এটি নিয়ে অনেক আবেগ রয়েছে। পাশাপাশি ছবিটি বিদেশে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত হয়েছে। আশা করছি, দেশে মুক্তির পর দর্শক ছবিটি দেখবেন। ‘দাওয়াল’ ছবির গল্পও অসাধারণ। এটিও দর্শক গ্রহণ করবেন।
ওটিটিতেও সমানতালে কাজ করছেন। অনেকেই বলছেন, ‘কাইজার’ আপনার ক্যারিয়ারের বাঁকবদলের ওয়েব সিরিজ। আপনি কী মনে করেন?
আমিও মনে করি এটিই আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। ‘কাইজার’-এ আমি মুখ্য ভূমিকায় ছিলাম না, এরপরও বেশ সাড়া পেয়েছি। রাস্তাঘাটে মানুষ আমাকে ‘অনন্ত’ বলে ডাকছে। সমালোচকদেরও প্রশংসা পেয়েছি।
পড়ালেখার খবর কী?
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স করছি। গত আগস্টে তৃতীয় বর্ষে উঠেছি। অভিনয়ের পাশাপাশি পড়াশোনাও নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছি।
অনেকেই আপনার অভিনয়ের ভক্ত। আপনি কার অভিনয় পছন্দ করেন?
মায়ের (শাহনাজ খুশী) অভিনয় আমার পছন্দ। তাঁর নাটক দেখেই অভিনয় শিখছি। এর বাইরে ফরীদি [হুমায়ুন ফরীদি] আঙ্কেলের অভিনয়ও ভালো লাগে। মনে পড়ে, বাবা বৃন্দাবন দাসের রচনা ও সাইদুল আনাম টুটুলের পরিচালনায় ‘মানিকজোড়’ নামে একটি নাটকে অভিনয় করেছিলেন ফরীদি আঙ্কেল। বাসায় বসে সিডিতে এটি দেখেছি। ওই সময় মা বলেছিলেন, যদি কোনো দিন অভিনয় করো, ফরীদির মতো অভিনয়ের চেষ্টা করবে। মায়ের কথাটি মনে রেখে ফরীদি আঙ্কেলের অভিনয় সব সময় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা করি। ফরীদি আঙ্কেলের নাটক দেখেও অভিনয় শিখেছি।
অভিনয় নিয়ে আপনার ভাবনার কথা জানতে চাই…
অভিনয়কে আমি খুব ভালোবাসি। আমার প্রথম লক্ষ্য, অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠার আগে দর্শক ও নির্মাতাদের কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলে ধরা। ভালো গল্প, চরিত্র ও নির্মাতাদের কাজের মধ্য দিয়েই তা সম্ভব। তাই যখনই ভালো কোনো কাজের সুযোগ পাব, নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজ করে যাব।
সূত্র: সমকাল।